ব্রাজিল নাকি আর্জেন্টিনা?


 

চলছে লাতিন আমেরিকার বিশ্বকাপ হিসেবে পরিচিত কোপা আমেরিকা-২০২১। এই মহাদেশীয় ফুটবল যুদ্ধে ১০ টি দল, দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে অংশ নিচ্ছে। দুটি গ্রুপ হয়, লাতিন আমেরিকার দক্ষিণ ও উত্তরাঞ্চলের ৫টি করে দেশ নিয়ে মোট দশটি দেশ। দক্ষিণাঞ্চল থেকে অংশগ্রহন করা পাঁচটি দল হলো আর্জেন্টিনা, বলিভিয়া, চিলি, প্যারাগুয়ে, উরুগুয়ে। উত্তরাঞ্চল থেকে অংশগ্রহণ করা দলগুলো হলো  ব্রাজিল (গত আসরের চ্যাম্পিয়ন; কোপা-২০২১ এর আয়োজক), কলম্বিয়া, ইকুয়েডর, পেরু, ভেনেজুয়েলা।


এবারের আসরটির আথিতেয়তা দিচ্ছে ব্রাজিল। দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবল সংস্থা কনমেবল কর্তৃক আয়োজিত এই টুর্নামেন্টটিতে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা ছাড়াও আরো ৮টি দেশ অংশ নিলেও সেগুলো নিয়ে খুব বেশি আগ্রহ নেই আমাদের দেশের মানুষের। পুরো জাতি আজ দুটি ভাগে বিভক্ত একদল আর্জেন্টাইন তো অন্যগ্রুপ ব্রাজিলীয়। সারা দিনজুড়ে চলে পক্ষে বিপক্ষে নানা যুক্তিতর্ক, তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ এবং সেগুলোর পর্যালোচনা। নিজের সমর্থন করা দলটিকে যেভাবেই হোক এগিয়ে রাখা চাই। ক্ষেত্র বিশেষে ভুল তথ্য ও উপাত্তের সাহায্য নিতেও দেখা যায় এইসব সমর্থকগোষ্টীদের একাংশকে। যারফলে ঘটে নানা অনাকাঙ্খিত ঘটনা। নিজের দলকে বড় করে উপস্থাপনের চেষ্টায় প্রায়ই হাতাহাতি, সংঘর্ষ, বর্বরতার মতো খবর উঠে আসে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সংবাদমাধ্যমগুলোতে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকসহ অন্যান্য যোগাযোগমাধ্যমে একদল সমর্থকগোষ্ঠী অন্য দলকে নিয়ে ট্রল, ব্যাঙ্গাত্মক চিত্র পোস্টসহ মেতে উঠেন  নানানসব উন্মাদনায়। আজগুবি তথ্য, ভিত্তিহীন কথাবার্তা নিয়েও চলে তর্ক।


আমরা বাঙালিরা ভৌগলিক কারনেই একটু আরাম এবং বিনোদন প্রিয় জাতি হিসেবে পরিচিত। বাঙালিদের সেই বিনোদনের অন্যতম অনুষঙ্গ হলো বিভিন্ন সময়ে আয়োজিত ক্রীড়ার বিভিন্ন বৈশ্বিক আসরগুলো। বাংলাদেশে সারাবছর চর্চিত খেলাটি ক্রিকেট। কারণ, ক্রিকেটে বাংলাদেশ দল এ জাতিকে নানা সময় সুখের বা আনন্দের কিছু মুহুর্তের উপহার দিয়েছে। সাকিব, মাশরাফি, মুশফিক, তামিম, মুস্তাফিজরা বিভিন্ন সময় দেশের হয়ে বা ভিন দেশের আয়োজিত টুর্নামেন্টে অংশগ্রহন ও সফল হয়ে এদেশের আপামর জনগণকে করেছে গর্বিত। সাকিব আল হাসান, ক্রিকেটে এক নম্বর অলরাউন্ডার হয়েছেন বহুবার যা দেশের মানুষকে করে মুগ্ধ। ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশের বেশ্বিক টুর্নামেন্টে ট্রফি জয়, টেস্ট সিরিজ জয়, ২০১৫ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠা, চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে অংশগ্রহণসহ ভালো ফল করা, এশিয়াকাপে সাফল্যসহ ক্রিকেটের এরকম প্রতিটা মুহূর্তেই বাঙালি মেতে উঠেছে উৎসবে। বলা যায় বাঙালি পুরোদস্তুর ক্রিকেট পাগল জাতি।  


২০০০ সালের আগে আমাদের দেশের মানুষের ফুটবলে অধিক আগ্রহ থাকলেও তা এখন নেই। সাম্প্রতিক অতীতে  বাংলাদেশ ফুটবলের ব্যর্থতায়, ক্রিকেটের সাফল্য আমরা ক্রিকেট নিয়ে উন্মাদনা করা জাতি। বলা হয়ে থাকে আমরা ক্রিকেট খাই, ক্রিকেটে ঘুমাই এবং ক্রিকেটেই স্বপ্ন দেখি। তা স্বত্তেও বিশ্বকাপ ফুটবল বা কোপা আমেরিকা অথবা ফুটবলের বড় কোনো টুর্নামেন্ট হলেই আমরা হয়ে যাই ফুটবল পাগল জাতি। বিশেষ করে বিশ্বকাপ বা কোপা এলেই আমাদের সবটা নিঙরে দিয়ে অকুণ্ঠ সমর্থন করি লাতিন আমেরিকার দুই পরাশক্তি ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনাকে। গুণে মানে কেউ কারো চেয়ে কম নয়। এদের একটি সর্বোচ্চ কোপা আমেরিকার ট্রফি জয়ী তো অন্যটি বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ চ্যাম্পিয়ন। এই দুই দলই যুগে যুগে তৈরি করে চলেছে কিংবদন্তী সব খেলোয়াড়। আর্জেন্টিনার যেমন ম্যারাডোনা ছিল, ব্রাজিলের ছিল পেলে। এই যুগে এসে ফুটবল সৌন্দর্যের প্রতীক মেসি তো ব্রাজিলের গোল মেশিন নেইমার। অতীত থেকে বর্তমান সব যায়গাতেই  ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনা চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী। প্রতিবেশী এই দুই দলের দ্বৈরথ হাজার হাজার মাইল পেরিয়ে এই বাংলায় এসে আছড়ে পড়ে। 


এই দুই দেশের প্রতিটা খেলোয়াড়ই যেন ফুটবলের নিখুঁত শিল্পী। যারা শুধু এই বাংলার মানুষকে নয়, পুরো বিশ্ববাসীরই নজর নিজেদের দিকে নিতে সক্ষম। ফুটবলের এই সৌন্দর্য পরিবার বা বন্ধুদের সাথে মিলে উপভোগ করি একযোগে। খুনসুটি থাকবেই, সমর্থনও থাকবে নিজ দলের প্রতি। তবে সেটা যেন কারো মনকে বা দেহকে আহত না করে হয়। ফুটবলের সৌন্দর্য, সুন্দর পরিবেশ বজায় রেখেই উপভোগ করব, এই হোক আমার এবং আপনার পণ। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা নাকি ফুটবল।


Post a Comment

0 Comments